September 26, 2014

তপোবন বিশ্ববিদ্যালয়

ফাহমিদ -উর-রহমান
তপোবন শব্দটার মানে হ”েছ মুনি-ঋষিদের আশ্রম কিংবা যে বনে মুনি-ঋষিরা
তপস্যার জন্য বসবাস করেন।
তপোবনে সাধারণত সংসারত্যাগী হিন্দু সন্ন্যাসীরা
সাধনা ও শাস্ত্র চর্চার জন্য অবস্থান করেন। আশ্রম কথাটার মানেও হ”েছ সংসারত্য
াগী সাধু-সন্ন্যাসীদের বাসস্থান। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতের হিন্দু ঋষিদের আদ
র্শে তার ধ্যানের শান্তিনিকেতন গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। সেই অর্থে

শান্তিনিকেতনকেই বলা চলে এক ধরনের তপোবন বা আশ্রম। শান্তিনিকেতন নামটা
দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ যে শান্তিনিকেতনের
কথা শুনে আমরা আপ্লুত হই সেটা পশ্চিমবঙ্গে বীরভূম জেলার বোলপুরে অবস্থিত। ে
দবেন্দ্রনাথ ছিলেন রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত একশ্বরবাদী ব্রাহ্মধর্মের
অনুসারী ও নেতা। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন গভীরভাবে ধর্মনিষ্ঠ ও আধ্য
াত্মিক প্রকৃতির মানুষ। জমিদারি ছেড়ে আধ্যাত্মিক সাধনার উদ্দেশ্যে তিনি
মাঝে মাঝে হিমালয়ে সন্ন্যাসীদের মতো নির্জনবাসে চলে যেতেন। আজ ে
যখানে শান্তিনিকেতন, সেখানে ছিল বিরাট দুটি ছাতিম গাছ আর আদিগন্ত
মাঠ। এমনি আসা-যাওয়ার পথে ছাতিম গাছের ছায়া দেবেন্দ্রনাথকে পুলকিত করে।
তিনি এখানে একটি আশ্রম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এই আশ্রম পত্তন করে
এবং ছাতিম গাছের চারদিকে আরও অনেক গাছ রোপন করে সাধানার জন্য তিনি
এখানে মাঝে মাঝে আসতেন। শান্তিনিকেতন নাম দিয়েছিলেন এজন্য যে,
তিনি এখানে এসে আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পেতেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন,
এখানে ছাতিম তলায় দেবেন্দ্রনাথ সূর্য ওঠার আগে এবং সূর্যা¯েÍর সময় ধ্য
ান করতে বসতেন এবং ভগবদগীতা ও উপনিষদের শেøাক পাঠ করতেন। দেবেন্দ্রনাথের
সঙ্গে ছোট বয়সেই রবীন্দ্রনাথ এসব জায়গায় ঘুরতে এসেছিলেন। তাই বলা চলে
বাল্যকাল থেকে প্রাচীন ভারতবর্ষের তপোবনের একটা আদর্শের ছাপ রবীন্দ্রনাথের ম
নের ওপর পড়েছিল। ১৮৬৩ সালে দেবেন্দ্রনাথ এই শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা ক
রেন। এখানে ছিল উপাসনা মন্দির, লাইব্রেরি ও অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা। এই
আশ্রমের রূপ ছিল পুরোপুরি আধ্যাত্মিক ও ধর্মভাবের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
শান্তিনিকেতনের এই জনশূন্য প্রান্তরে ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে গড়ে
ওঠে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়। দেবেন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথের ওপর এই বিদ্যালয় গড়ে ে
তালার ভার দেন। দেবেন্দ্রনাথও বুঝতে পেরেছিলন তার মিসটিক ও ধর্ম ভাবটি
রবীন্দ্রনাথই কিছুটা পেয়েছেন। এই বিদ্যালয় গড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের
জমিদারি ছেড়ে বীরভূমের রুক্ষ্ম কঠিন প্রান্তরে এসে উপস্থিত হন। শান্তিনিকেত
নের মাটি ছিল লাল। এটিকে পটভূমি রেখেই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন তার বিখ্যাত
গান: গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির পথ, আমার মন ভুলায়রে। শান্তিনিকেতন বিদ্যাল
য়ের উদ্দেশ্য ছিল ব্রহ্মচর্য আদর্শে বালকদের জীবনযাপন ও শিÿালাভ। এজন্য এই বিদ্য
ালয়কে বলা হতো শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম। ব্রহ্মচর্য হ”েছ হিন্দু শাস্ত্রমতে
ভোগবাসনা বর্জিত জীবনযাপন। এই বিদ্যালয় ছিল আবাসিক। এর ছাত্রদের পুে
রাপুরি হিন্দু সমাজের আচার পালন করতে হতো। যা কিছু হিন্দু সমাজ বিরোধী
তা এ বিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছিল। প্রাচীন ভারতের সন্ন্যাসীদের আদর্শ যেমন –বিলাস
ত্যাগ, আত্মসংযম, নিয়মনিষ্ঠা, বর্ণাশ্রম প্রভৃতি বিষয়ের ওপর এখানে জোর ে
দয়া হতো। তেমনি শিÿকদের প্রতি নির্বিচার ভক্তির কথা বলা হতো।
আশ্রম বিদ্যালয়ের শিÿককে বলা হতো গুরু। রবীন্দ্রনাথকে যে গুরুদেব বলা হয় তাও
কিন্তু ওই প্রাচীন ভারতের আদর্শের অনুকরণ। শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে কবি এই গু
রু-শিষ্যের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। জ্ঞানার্জন বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ ম
নে করতেন, গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক হবে পুরোপুরি আধ্যাত্মিক। রবীন্দ্রনাথ ছাত্রদের
জন্য ব্রাহ্মণ শিÿকদের  পাদস্পর্শপূর্বক প্রণাম বাধ্যতামূলক করেছিলেন। অব্রাহ্মণ
শিÿকদের জন্য এ ব্যবস্থা রাখেননি। এর ভেতরেও আছে কবির সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি।
জাতপাতের বিচার থেকে এই আশ্রম কিন্তু মুক্তি পায়নি।
এই আশ্রম বিদ্যালয়ের শিÿাপ্রাণালীতে আমরা পুরোপুরি হিন্দু ধর্মের পরিবেশ
পাই। নীরবতা পালনের ব্যবস্থা, প্রার্থনার নির্ধারিত স্থান, ধ্যানের নির্ধারিত স্থান
এবং গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ তারই আয়োজন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন ভারতীয় রীতি অনুসারে
পরিবেশের সঙ্গে আধ্যাত্মিক শিÿার যোগসূত্র ঘটানোর কথা বলতেন। এ কারণে
এখানে গাছতলায় কাস হতো। এখনও সে রীতি প্রচলিত আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখে
ছেন, তিনি জামতালয় বসে ছাত্রদের রামায়ণ-মহাভারত থেকে পাঠ করে শোনাতেন।
প্রথমদিকে এ বিদ্যালয়ে সং¯কৃত জানা ব্রাহ্মণ পÐিতরাই শিÿকের কাজ করতেন।
বিধুশেখর শাস্ত্রী ছিলেন এখানে সংস্কৃতের পÐিত। তিনি প্রাচীন টোল
চতুষ্পাঠীর শিÿা প্রণালীকে কিছুটা সংস্কার করে এবং এক পাশ্চাত্য শিÿার স
ঙ্গে যুক্ত করে নতুন একটা শিÿা প্রণালী শান্তিনিকেতন বিদ্যায়ের প্রচলন করার
জন্য রবীন্দ্রনাথের অনুমতি চেয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তাতে সায় দিয়েছিলেন।
শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিÿা প্রণালীকে বলা যাবে না কোনোভাই
আধুনিক ও সেকুলার। আচার্য যদুনাথ সরকার ও শিবনারায়ন রায় শান্তিনিকেতন
বিদ্যালয় ও পরবর্তীকালের বিশ্বভারতীকে টোল ও চতুষ্পাঠীর বেশি মনে করতেন না।
দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর মৃত্যুর আগে ডিড করে গিয়েছিলেন এই বলে যে এই
প্রতিষ্ঠান শুধু ব্রাহ্মধর্ম প্রচার ও প্রসারের পরিপ্রেÿিতে সৃষ্টি হয়েছে। নিজের
গড়া প্রতিষ্ঠান সসম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন : ‘আমি ভারতীয় ব্রহ্মচর্যের
প্রাচীন আদর্শে আমার ছাত্রদিগকে নির্জনে, নিরুদ্বেগে পবিত্র, নির্মলভাবে
মানুষ করিয়া তুলিতে চাই।... বিদেশী ¤েø”ছতাকে বরণ করা অপেÿ মৃত্যু শ্রেয়।
ইহা হৃদয়ে গাঁথিয়া রাখিও। স্বধর্মে নিধনং শ্রেয়ঃ পরধর্মো ভয়াবহ।’ রবীন্দ্রনাথ
১৯১২ সালে শান্তিনিকেতনের কাছে সুরুলগ্রামে শ্রীনিকেতনের কাজ শুরু কে
রন। তিনি বিশ্বভারতীর সূচনা করেন ১৯১৮ তে এবং তার আনুষ্ঠানিক স্থাপনা হয়
১৯২১-এ। শ্রীনিকেতনের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামচর্চা ও পলøী সংগঠন। বিশ্বভারতার উে
দ্দশ্য ছিল প্রাচীন ভারতীয় আর্য আদর্শ ও সভ্যতাকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া।
বিশ্বভারতীকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর
প্রকৃতি প্রচলিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ছিল না। কবির জীবিতকালে বিশ্বভরতী ে
থকে ডিগ্রি দেয়া হতো না। বিশ্বভারতীর শিÿাকে তিনি ডিগ্রির শিÿা হতে
দিতে চাননি। প্রয়োজনের খাতিরে শান্তিনিকেতন- শ্রীনিকেতনে পাঠান্তে
ছাত্রছাত্রীরা কেউ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীÿা দিয়ে ডিগ্রি নিত। এই ব্যবস্থা
কবি করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন কর্ণধার স্যার আশুতোষ মুখার্জির
সহায়তায়। শান্তিনিকেতন আশ্রম থেকে শুরু করে শন্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম.
তারপর শ্রীনিকেতন ও বিশ্বভারতী কবির প্রাচীন ভারতীয় ভাবাদর্শের একটি
ধারাবাহিক পরম্পরা মাত্র। এসব প্রতিষ্ঠানের ভেতর দিয়ে কবি প্রাচীন ভারতের হিন্দু
আদর্শকে কীভাবে আধুনিক জীবনে সফল করে তোলা যায় তার কার্যকরী দিকগুলো
নিয়ে পরীÿা-নিরীÿ করে দেখেছিলেন। এসব শিÿা প্রতিষ্ঠানের ভেতর দিয়ে তিনি
যে জীবনধারা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন তার পেছনে কবির ধর্মভাব একটা বড়
ভূমিকা পালন করেছিল। রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরে আপ্লুত মানুষ ছিলেন। ধর্মভাব ছাড়া
থাকতে পারতেন না। তিনি তার শিÿা  প্রতিষ্ঠানে এই ঈশ্বর ভাবটি পুরোপুরি
ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন।
আমাদের দেশে রবীন্দ্রচর্চার চেয়ে রবীন্দ্রপূজার পরিমাণই বেশি। এই পূজা আবার
অধিকাংশই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমÐিত। এসব রবীন্দ্রপূজারীর দল আমাদের এখানে
সেকুলার, আধুনিকমনস্ক ও প্রগতিশীল বলেও পরিচিত। সেকুলারিজম ও প্রগতির
সঙ্গে কবির এই ঈশ্বর ভাবের যোগসূত্রটা কোথায় তা বোঝা বেশ মুশকিল। এখা
নে আর একদল রবীন্দ্রপূজারী আছেন যারা নাকি বামপন্থী হিসেবে পরিচিত। ে
কাথায় কাল মার্কসের শ্রেণী সংগ্রাম ও প্রোলেতারিয়েত কালচার, আর কোথায়
রবীন্দ্রনাথের ঈশ্বরভাবনা- এ এক চরম বৈপরীত্য ও বিভ্রান্তি ছাড়া কিছু নয়। মাঝে
মাঝে মনে হয়, আমাদের দেশের কমিউনিস্টরা যত না প্রোলেতারিয়েত তার চেয়ে
অনেক বেশি ‘বাবু’।
আগেই বলছি, রবীন্দ্রনাথের বিশ্বভারতী কাজ শুরু করে ১৯২১ সালে । কবি ততদিনে
নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি তখন প্রতিষ্ঠিত।
আন্তর্জাতিকতার খাতিরে হোক কিংবা নোবেল প্রাইজের মান রÿার জন্য হোক,
কবির এ সময় তার শান্তিনিকেতন-বিশ্বভারতীকে উদারীকরণ করার চেষ্টা করে এবং
টোল চতুষ্পাঠীর সঙ্কীর্ণতাকে তিনি কিছুটা ঢাকার চেষ্টা করেন। তিনি
এখানে বিভিন্ন ধর্মের ছেলেমেয়েদের পড়ার অনুমতি দেন। দেশ-বিদেশ থেকে ক
য়েকজন পÐিতকে ডেকে আনেন এখানে পড়ানোর জন্য। এদের মধ্যে এলমহারসট,
এন্ডুজ, লেসনি, লেভি, তু”েচ, উইনটার নিটজের পান্ডিত্যের কথা আমরা শুনেছি।
মÐলানা জিয়াউদ্দীন ছিলেন আরবি-ফারসির শিÿক। তার মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথ একটা
সুন্দর কবিতা লিখেছিলেন। তবে এতকিছুর পরও শান্তিনিকেতনের মৌলিক যে ভাব
তপোবন, তার থেকে এটি কখনোই বিচ্যুত হয়নি।
ভারত স্বাধীন হওয়ার পর এ বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
এখান থেকে ডিগ্রিও দেয়া শুরু হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে যে কতখানি
আধুনিক ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে, এরকম কিছু প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ওপর এখানকার পড়াশোনার মিল
আদৌ নাই। এটা মূলত ললিতকলার বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক একটা স্রেফ সাংস্কৃ
তিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে টিকে আছে। সঙ্গীত, নৃত্য, চিত্রকলার, নাটক, চল”ি
চত্র প্রভৃতি বিষয়ের ওপর এখানে মূলত ডিগ্রি দেয়া হয়। রবীন্দ্রনাথের নামের গুণেই
বিশ্বভারতীর খ্যাতি। বিশ্বভারতীর নিজের সামর্থ্য হয়নি  কখনও খ্যাতিমান হয়ে
্ওঠার।
এবারকার কবির স্মৃতিবার্ষিকীতে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শান্তিনিকেতনের
আদলে শাহজাদপুরে একটি শাখাসহ শিলাইদহে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা
হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি কী রকম তা এখনও স্পষ্ট না হয়েও ধরে নেয়া যায়,
শান্তিনিকেতনের মতো এটা একটা ব্রহ্মচর্যাশ্রম হবে। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী
শব্দটার ব্যাখ্যা করেছিলেন- বিশ্বের জন্য ভারতের বাণী। সেই বাণীকে বিশ্বভারতী
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কবি ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন চারদিকে। প্র¯
Íাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টিও তপোবনের আদর্শ প্রচারের একটা মাধ্যম হতে চলেছে
কিনা, সেটাও আমাদের বোধগম্য নয়। তবে শান্তিনিকেতন, তপোবন বা
বিশ্বভারতী যাই হোক না কেন, এর মৌল চেতনার সঙ্গে বাংলাদেশের গরিষ্ঠ সংখ্যক
মানুষের ভাবপ্রবাহের কোনো সম্পর্ক নেই। রবীন্দ্রনাথ আজ একটা মিথে পরিণত
হয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ যে একজন মানুষ ছিলেন, মানুষ হিসেব তার ব্যর্থতা থাকতে
পারে এবং তার প্রতিষ্ঠিত শিÿায়তনগুলো যে ত্রæটিমুক্ত নয় এসব কথা মুক্তমন নি
য়ে বিবেচনা করার শক্তিটিও এখন আমাদের বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমাদের প্রয়োজ
নেই কবির ও মানুষ রবীন্দ্রনাথের যথার্থ মূল্যায়ন প্রয়োজন। তার সুদীর্ঘ আশি
বছরের জীবনে কোনো ত্রæটি নেই এটা কোনো কথা হতে পারে না।
যে শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে শান্তিনিকেতনের আদলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা
উঠেছে, সেখানে ছিল ঠাকুর পরিবারের জমিদারি। জমিদার হিসেবে ঠাকুর
পরিবার ছিল অত্যাচারী। এরা গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। বুট পরে প্রজাকে লাথি ে
মরেছেন মহর্ষি বলে পরিচিত রবীন্দ্রনাথের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। পূর্ববঙ্গের
জমিদারিগুলোতে ঠাকুর পরিবারের প্রজা হিতৈষণার কোনো নামগন্ধ নেই। তারা
স্কুল করেননি, দীঘি কাটেননি, দানদÿিনারও তেমন কোনো নজির নেই। অমিতাভ
চৌধুরী লিখেছেন- দফায় দফায় খাজনা বৃদ্ধি ও জোর জবরদ¯িÍ করে তা আদায়ের
প্রতিবাদে শিলাইদহে ইসমাইল মোলøার নেতৃত্বে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে প্রজা
বিদ্রোহ ঘটেছিল। পতিসরে রবীন্দ্রনাথ কৃষিব্যাংক করেছিলেন, সুদের টাকা
খাটিয়ে ব্যবসা করার জন্য চিরস্থায়ী বন্দোব¯িÍর মাধ্যমে ব্রিটিশের সবচেয়ে
সুবিদাপ্রাপ্ত। পরিবারগুলোর একটি ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার। ১৮-১৯
শতকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে টিকিয়ে রাখতে যারা সবচেয়ে বেশি সহে
যাগিতা করেছিল, ঠাকুর পরিবার তার একটি। এর বিনিময়ে ব্রিটিশ তাদের দিে
য়ছিল অসহরঃরবং ড়ভ ষরভব . আর প্রজা শোষনের এক”ছত্র অধিকার। শিলাইদহ,
শাহজাদপুর, পতিসরের আকাশে-বাতাসে ইসমাইল মোলøার মতো অগণিত রায়ত,
কৃষক আর নিপীড়িত মানুষের হাহাকার ও কান্না মিয়ে আছে। শিলাইদহে যে
বিশ্ববিদ্যালয় হবে তা এই নিপীড়িত মানুষের হাহাকারকে নিত্য উপহার করবে মাত্র।
শিলাইদহের প্র¯Íাবিত বিশ্ববিদ্যারয়রে নামকরণ হতে পারে বিপ্লবী কৃষক ইসমাইল
মোলøার নামে, যিনি ঠাকুর জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা কে
রছিলেন। অথবা কাঙ্গাল হরিনাথের নামে যিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি
অপকর্মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছিলেন। শিলাইদহের কাজী মিঞাজানের নাম
আমরা আদৌ স্মরণ করি না। এই বিপ্লবী ওহাবি নেতা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের
বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে জীবন দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম তার নামেও হতে পারে।
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অনুগত একজন জমিদারের নাম ধরে রাখার চেয়ে একজন
বিপ্লবীর স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ পূর্ববাংলার চরিত্রের
মধ্যে বিদ্রোহ ও বিপ্লব মিশে আছে। অন্যদিকে শান্তিনিকেতনের আদলে
প্রতিষ্ঠিত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়ালে তপোবন, ব্রহ্মচর্যাশ্র, টোল বা
চতুষ্পাঠীরে আমাদের প্রয়োজন নেই। আমাদের একন একটা বিশ্ববিদ্যালয় দরার ে
যখানে আমাদের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে একালের জ্ঞান বিজ্ঞানের যোগ থাকা
চাই, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তুলবে। রবীন্দ্রনাথ এদেশে
এখন যত না শিল্প সংস্কৃতি জগতের বিষয়, তার চেয়ে অনেক বেশি রাজনীতির
বিষয়। ষাটের দশক থেকে আমাদের এখানে এই রবীন্দ্র নিসড্রমের রবীন্দ্র চর্চা শুরু।
আড়ালে এদেশের একটি তপোবনীয় মানস গড়ে তোলাই এর সুধুরপ্রসারী লÿ্য। এ
লÿ্যে উদ্যোক্তারা অনেকখানি সফল হয়েছ এবং তপোবনীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের
পÿে একটি গণভিত্তি তৈরি হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই, শিলাইদহের প্র¯Íাবিত
বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটা সরকারি পর্যায়ের তপোবন।
দীর্ঘদিন ধরে প্রচার প্রচারাভিযান ও মিডিয়ার জোরে যে তপোবনীয় মানস তৈরি
হয়েছে তা বাংলাদেশের জন্য হয়েছে ** অনেকেই আছেন যারা *** ভারতীয়
আধিপত্য
আধিপত্য
**আমাদের বেথরে এক এক ** বিকাশ ঘটিয়েছে। এই দাস মানা ** মিত্র আরকে
মিত্র নয়, এই ভেদজ্ঞানটুকুও আমরা হােিয় ফেলেছি। ফলে ভারতীয় আধিপত্যবাদের
বিরুদ্ধে আজও কোনো জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি। এদেশে রবীন্দ্র রাজনীতি এটার
সাফল্য। রবীন্দ্র-=সাহিত্য নয়,

No comments:

Post a Comment

---হামাস কী এবং কেন ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ করছে

--- হামাস   কী   এবং   কেন   ইসরাইলের   সাথে   যুদ্ধ   করছে হামাস   ২০০৭   সালের   নির্বাচনে   জয়ী   হলেও   তাদের   পরো   ফিলিস্তিনের   ক্ষম...